Poultry Robot

বেঙ্গল  চ্যাম্পের ভিশন “ রোবট ম্যানুফেকচারিং এ বিশ্বনেতা হওয়ার ” লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে প্রথম ধাপ হচ্ছে একটা পোল্ট্রি রোবট নির্মাণ করা।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশ নিজ পোল্ট্রি চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশে রপ্তানি করে থাকে। এইসব দেশে পোল্ট্রি ফার্মের সংখ্যা অগণিত। ২০২১ সালে শুধু মাত্র চীনেই মুরগির সংখ্যা ৫.১২ বিলিয়ন।

তাহলে পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়টি পোল্ট্রি ফার্ম আছে আপনারাই অনুমান করে নিন।

একটি পোল্ট্রি ফার্ম মেইনটেইন অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেইসব চ্যালেঞ্জ সমূহকে মোকাবেলা করে পোল্ট্রি ফার্মের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বেঙ্গল চ্যাম্পের আপকামিং প্রোজেক্ট পোল্ট্রি রোবট।

পোল্ট্রি রোবট যেভাবে পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি করবেঃ

১। ফার্মে বাড়ন্ত মুরগি গুলোকে শারীরিক বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর পর মুভ করাতে হয় । যদি কোন মানুষ এই কাজ করতে যায় তখন সব গুলো মূরগি ঠিকঠাক ভাবে নড়েছে কিনা সেই মানুষের পক্ষে খেয়াল রাখা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। 

চলেন ব্যাখ্যা করি কেনো এইটা মানুষের পক্ষে চ্যালেঞ্জিং। ধরুন আপনি কোনও একটা বাজারে গেলেন যেখানে কয়েক শত দোকান আছে। প্রত্যেকটা দোকানে ঘুরে ঘুরে কি কি হচ্ছে প্রতিটা মুহুর্তে তার লিস্ট করার দায়িত্ব কোন মানুষকে দেওয়া হলো। একজন মানুষ কিন্তু টানা কয়েক ঘন্টা এইটা করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন তার মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না।

এখন চলুন ব্যাখ্যা করি রোবট কিভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে। জটিল কাজে মানুষের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে গেলেও রোবটের মস্তিষ্ক ক্লান্ত হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে রোবটের মস্তিষ্ক আবার কি? একটা অনবোর্ড সিংগেল কম্পিউটার ব্যাবহার করা হবে বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে। যেটা আবার ক্লাউডের সাথে সংযুক্ত থাকবে। যেহেতু কম্পিউটার প্রয়োজনীয় বিদ্যুতশক্তি পেলে এবং তার প্রসেসরের কুলিং প্রসেস চলতে থাকলে সে অনবরত কাজ করতে থাকে। তাই এই রোবটের ব্রেইন তথা অনবোর্ড সিংগেল কম্পিউটার টানা একসপ্তাহ ও অনবরত কাজ করে যেতে পারবে যদি তাকে একটানা বিদ্যুত শক্তি সরবরাহ করা হয় এবং যদি তার প্রসেসিং ইউনিট ঠান্ডা রাখার ব্যাবস্থা করা হয়। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে সেই ব্যাবস্থা থাকবে।

২। দিতীয় চ্যালেঞ্জিং কাজ হচ্ছে অসুস্থ মুরগিকে শনাক্ত করা।  যদি বার্ড ফ্লুর মতো সংক্রামক রোগ হয় তাহলে রোগ শনাক্ত করার আগেই সেটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে রয়েছে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা। অসুস্থ বা জীবাণু আক্রান্ত মুরগীর শরীরের টেম্পারেচার স্বাভাবিক সুস্থ মুরগির টেম্পারেচারের তুলনায় ভিন্ন হয়। থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা এই তাপমাত্রার পরিবর্তন খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারে। এছাড়া থার্মাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত তথ্য ক্লাউডে সংরক্ষিত থাকবে। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটের অনবোর্ড সিংগেল কম্পিউটার এর একটি ফিচার হচ্ছে এতে মেশিন লার্নিং তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সফটওয়্যার ইন্সটল করা যায়। সুতরাং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার করে খুব দ্রুতই অসুস্থ মুরগীকে শনাক্ত করা যাবে। যদি বার্ড ফ্লুর মতো সংক্রামক রোগের জীবানূ দ্বারা কোন মুরগি আক্রান্ত হয় তাহলে সেটা ছড়িয়ে পড়ার আগেই রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তা শনাক্ত করে ক্লাউড সার্ভারে পাঠিয়ে দেবে। যেই কাজটা একজন মানুষের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং।

৩। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে থার্মাল ক্যামেরা ছাড়া ও রয়েছে আরো কয়েকপ্রকার সেন্সর যেমন এ্যামোনিয়া ( NH3 ) গ্যাস ডিটেকশন সেন্সর এবং হাইড্রোজেন সালফাইড  ( H2S ) গ্যাস সেন্সর। মুরগির বিষ্ঠা থেকে প্রচুর পরিমাণে এ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপাদন হয় । এবং মুরগির ডিম পচে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই দুই প্রকার গ্যাসই খুবই বিষাক্ত। এই গ্যাসের পরিমাণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে মুরগি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেতে পারে। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবট পুরো মুরগির ফার্ম ঘুরে দেখবে এবং যদি দেখতে পায় যে কোথাও এ্যামোনিয়া অথবা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে তাহলে রোবট টা ক্লাউডে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবে। ক্লাউডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ্যালার্ম চলে যাবে যাতে তারা ব্যাবস্থা নিতে পারে।

৪। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটের আরেকটি কাজ হচ্ছে জীবাণুনাশক স্প্রে করা। একজন মানুষকে যদি পোল্ট্রি ফার্মে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেয়া হয় তখন সেই মানুষ সব জায়গায় সমানভাবে স্প্রে করে দেবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবট আরোও বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করবে। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে রয়েছে ড্যাপথ ক্যামেরা , থার্মাল ক্যামেরা , গ্যাস ডিটেকটর সহ আরোও বিভিন্ন রকম সেন্সর। এইসব সেন্সরের মাধ্যমে প্রাপ্ত এনভাইরনমেন্টাল ডাটা সে তার অনবোর্ড সিংগেল কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রসেসিং করে বুঝে নেবে যে কোথায় কি পরিমাণ জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।

৫। সবশেষ চ্যলেঞ্জিং বিষয়টি হচ্ছে পাহারা দেয়া। রাতের বেলা পোল্ট্রি ফার্মের মুরগির ঘুমের সময় লাইট অফ রাখতেই হয়। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফার্মে এই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কিছু বিষাক্ত বা শিকারী প্রানীর আবির্ভাব ঘটে যাদের কাজ পোল্ট্রি ফার্মের মুরগি শিকার করা। যেমন সাপ , খাটাশ  , বনবিড়াল , শেয়াল এবং বানর। বেঙ্গল চ্যাম্পের পোল্ট্রি রোবটে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকায় তা অন্ধকারেও এইসব ক্ষতিকারক প্রাণীসমূহকে চিহ্নিত করতে পারবে। এবং সার্ভারে পাঠিয়ে দিতে পারবে।

৬।এটি সারা বছর ডাটা কালেক্ট করতে পারবে এবং যা পরবর্তীতে পোল্ট্রি ক্ষেত্রে  গবেষণায় ব্যাপক সহযোগিতা করবে।

১। https://www.statista.com/statistics/263961/top-countries-worldwide-by-chicken-stock-2007/